মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

সমীর রায়চৌধুরীকে : সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের চিঠি

17 Ratanbabu Road
Calcutta -2
Phone : 528505
প্রিয় সমীর,
টেলিগ্রাম দুটোর উত্তর পেলাম । চিঠির উত্তর পাইনি, জানতাম পাব না । ইতিমধ্যে তোমার জন্য এতো তীব্রভাবে ফিল করছি যে ফোন নাম্বার জানা থাকলে তোমাকে আজ নিশ্চয়ই ট্রাঙ্ক কল করতাম । তুমি নিশ্চয়ই আমার এই ধরণের করিতকর্মে বিশ্বাস করো, অন্যথায় আমার 'আইডিনটিটি' বলে কিছু নেই। মৌলিকতা নেই । How else to identify my originality ? তুমি ডেকে দ্যাখো ।
পুষণ ফিরে এসেছে । ফোন করেছিল আজ, এসেই । ওদের গাড়ি রাস্তায় খারাপ হয়, ফলকাবাদ ফেরার পথে, তাই তোমাদের জন্যে রাখা সময়ের ব্যবহার করতে পারেনি । দেখা করে আসতে পারেনি বলে কী দুঃখ তাদের । ওরা কানায় কানায় ভরে এসেছে এবং উপচে পড়ার ব্যাপারটা করে দিয়েছ তোমরা, বিশেষত বেলা । আমি পুষণকে প্রথমেই বললাম, 'সে কথা থাক । সমীরের ফোন নাম্বার জানো?'
আসলে আমি প্রায় মাসতিনেক রিনাদের নদীতীরের বাড়িতে থেকে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছি । তাই বহু ক্ষবিসিষ্ট ত্রিতল শতায়ু বাড়িটিতে আজো একটি সচল টেলিফোন এবং রিনার প্রবৃদ্ধ বাবা-মা শুধু থেকে গেছে । একমাত্র দাদাকে ভবানীপুরে থাকতে হয় । আমাদের ও বাড়ির পাম্প ও টিউবওয়েল খারাপ । একতলা থেকে স্খলিত ঘুঙুরের দিনে কয়েকবার শুধু টেলিফোনের শব্দ ককনো পর পর কদিন তাও না । এছাড়া যোগাযোগ হারা বাড়িটি ।
শোনো, সমীর, গিয়ে পড়ছি । পারলে বন্ধুবান্ধবসহ, নইলে বোকার মতো একা গিয়ে পড়ছি । তুমি আগামী দিনপনেরো আছো তো ? একটা শুকনো কুয়ার নিচে টঙ করে বেয়ে উঠে আসছে শূন্য বালতি, দড়িতে ছেঁড়ার পটপট আওয়াজ, ছেঁড়া দড়ি-তন্তুতে সূর্যাস্তরশ্মির মতো আমি পাকে পাকে জড়িয়ে ।
                                                                         সন্দীপন  
( সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলনে পুলিশের পক্ষে সাক্ষ্য দেবার পর সমীর রায়চৌধুরী তাঁদের চিঠি লিখতেন না । কেউ চিঠি লিখলে টেলিগ্রামে উত্তর দিতেন । বন্ধুরা তবুও সমীর রায়চৌধুরীকে ব্যবহার করে নিতেন । আত্মীয়দের হনিমুন অথবা বেড়াবার জন্য ডাকবাংলো বুক করে দিতে বলতেন, মহুয়ার মদ ও অফিসের আর্দালির ব্যবস্হা করে দিতে বলতেন । সমীর ও তাঁর স্ত্রী বেলা অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্হা করতেন, ঘুরে বেড়াবার জন্য অফিসের গাড়ি দিতেন । এই চিঠিতে সন্দীপনের চাতুর্য ধরা পড়ে যায় । ) 
                                             
                             সমীর রায়চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী বেলা, তাঁদের বাঁশদ্রোণীর বাড়িতে

সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের চিঠি : সমীর রায়চৌধুরীকে

17 Ratanbabu Road
Calcutta -2
Phone 528505
প্রিয় সমীর
মাঝখানে একটা পোস্টকার্ড দিয়েছিলুম । উত্তর দাওনি যথারীতি । যাইহোক । বেলা, হানি, টোটন, বিটুকে নিয়ে সবাই ভালো আছেন এবং থাকবে জানি । তুমি যমাতি ।
কলকাতায় খুবই নিরাপদ কাটছে । শীতলের ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক -- নার্সিংহোমে । বিপদ কাটছে । এস. সি. চৌধুরী, আইসিসিইউ, উডল্যাণ্ড নার্সিং হোম, আলিপুর, কলকাতা -২৭ এই ঠিকানায় ওকে চিঠি দিও । ইনটেনসিভ কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে আছে  আজ দিন দশেক । আমার মতন থাই-ল্যাণ্ডের অর্কিড  ( প্যারাসাইট ) এখন মহীরুহচ্যূত ।
কৃত্তিবাস শারদীয় বেরিয়েছে । ১০১ টি জীবনানন্দের কবিতা* এবং আমার গল্পের জন্য এবার গুদামসাফ রেকর্ড বিক্রি হয়েছে । এছাড়া আমি আর একটা গল্প লিখেছি শারদয় এক্ষণ-এ । দুটোই বেশ বড়ো গল্প । যথেষ্ট ভালো লিখেছি । তাই শ্মশানের শান্তি মনে জেগেছে ।
আর এক কথা । আমার ভাইঝি ডা. মিতালি গাঙ্গুলি, এমবিবিএস, ও তার সদ্যবিবাহিত স্বামী রুনু গাঙ্গুলি ( প্রশান্ত ) এনজিনিয়ার -- এরা বরাইবুরুতে ১১, ১২, ১৩, ১৪ নভেম্বর থাকতে চায় । ঐ চারদিন বুক করে আমাকে টেলিগ্রাম করবে কী, ফোন ? 
চিঠির উত্তর দেবে কী ?
সন্দীপন ।
*১০১ জীবনানন্দের অগ্রন্হিত কবিতা : সম্পাদনা সুব্রত রুদ্র ।
( হাংরি আন্দোলন মামলায় পুলিশের পক্ষে সাক্ষ্য দেবার পর সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমীর রায়চৌধুরীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল । সমীর কারোর চিঠির উত্তর দিতেন না । কিন্তু তথাকথিত বন্ধুরা সমীর রায়চৌধুরীকে যখন ইচ্ছা এক্সপ্লয়েট করেছেন । সমীর রায়চৌধুরী "হাওয়া৪৯" পত্রিকা সম্পাদনা আরম্ভ করলে এই বন্ধুরা তাঁকে নিজেদের গল্প-উপন্যাস দিয়ে সাহায্য করেননি । )

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের চিঠি : সমীর রায়চৌধুরীকে

১৯ কর্ণেল বিশ্বাস রোড
কলকাতা ১৯
সমীর,
গত সপ্তায় শান্তি খুকু আর বাচ্চাদের নিয়ে চাইবাসা গেল । ওর কাছে তোর চিঠি দেখলাম । কেমন আছিস ? বহুকাল দেখিনি তোদের । ভেবেছিলুম চলে যাবো তোদের দেখতে, মেয়ে আটকে দিল । ওর পরীক্ষা চলছে । আমি থাকলে, নাকি ওর সাহায্য হবে ।
গরমের ছুটিতে তোরা নাকি আসছিস ? কবে আসবি চিঠিতে জানাস ।
তোর বাঁশদ্রোণীর বাড়িটা ভুতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়েছে । তুই তো কালীদাকে চিনিস । কালীদার কমপাউণ্ডার বা Guiding Angel বলতে পারিস কানাইকে । ও কালীদার Chamber-এ থাকে । আমি বলছিলুম Chamber  এর পর ও যদি তোর বাড়িতে গিয়ে রাতটা কাটায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজটা করে তাহলে ভালোই হয় । তোর আর বেলার কী মত ? তাহলে তোরা এলে আমি একদিন কানাইকে নিয়ে যাব । আমরা ভালো আছি । হনিবাবু, টোতন, বিটুকে আমার আশীর্বাদ দিস । বেলা কেমন আছে ? তোরা আমার ভালোবাসা নিস ।
শক্তি
৫ এপ্রিল ১৯৮১
( হাংরি আন্দোলন মামলায় পুলিশের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ায় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমীর রায়চৌধুরীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল । বন্ধুবৎসল সমীর রায়চৌধুরীকে তাঁর বন্ধুরা কেমন এক্সপ্লয়েট করতেন এই চিঠিটি তার নিদর্শন । সমীর রায়চৌধুরী "হাওয়া৪৯" পত্রিকা প্রকাশ করা আরম্ভ করলে তাঁর বন্ধুরা তাঁকে লেখা দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে যাননি । সমীর রায়চৌধুরীর গল্প ও প্রবন্ধ অন্যত্র প্রকাশের ব্যবস্হাও তাঁরা কখনও করেননি ; কেবল তাঁকে ব্যবহার করেছেন । শক্তি চট্টোপাধ্যায় দুই বৎসর সমীর রায়চৌধুরীর চাইবাসার বাসায় অতিথি হয়ে ছিলেন । )
শান্তি - কবি শান্তি লাহিড়ী
খুকু - শান্তি লাহিড়ির স্ত্রী, সমীরের ছোট শ্যালিকা
বেলা - সমীরের স্ত্রী
হনি - সমীরের মেয়ে
টোটন, বিটু - সমীরের ছেলে