মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১২

প্রদীপ চৌধুরীর চিঠি ( মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা )

প্রিয় মলয়,
        এর মধ্যে তোমাকে চিঠি, সুভাষকে চিঠি এবং টেলিগ্রাম পাঠিয়েছি, তোমার ঠিকানা সম্পর্কে আমি শিওর নই, তাই আর কিছু করতে পারলাম না। ট্রাংক কল করার ইচ্ছে ছিল।
        কলকাতার পুলিশ আমাকে ৩১ মার্চ, ৬৫ ত্রিপুরায় এসে গ্রেপ্তার করেছে ; কিন্তু আজ আর সেই প্রাথমিক উচ্ছাস একদম নেই, জুজুর ভয়ও নেই। কবিতার বুকের ওপর চেপে বসলে সম্ভবত এইটেই ভবিতব্য। তুমি হাজতে বসে যা আমাকে লিখেছিলে ---- আমি তার সিগনিফিকান্স আগে যেমন, এখন তার চেয়ে অনেক স্বাভাবিক, তাই অনেক ভয়ংকর করে ভাবতে পারছি।
        অনেকদিন এমন নিঃসঙ্গতা ও ভয় ও অনুশোচনায় কাটিয়েছি যে, কী দারুণ উৎকন্ঠার ভিতর আমি প্রদীপ চৌধুরীর যাবতীয় আবরণ খুলে, লাথি মেরে নষ্ট করে, একজন কবন্ধ লেখকে পরিণত হয়েছি। আমাকে না দেখলে আমার মুখোমুখি না হলে, তুমি বুঝতে পারবে না। অসম্ভব দুঃখ পেয়েছি যেদিন শৈলেশ্বরদের ঠিকানা থেকে আমার বই ফেরত এসেছিল ( ওরা রিফিউজ করেছিল ) --- হ্যাঁ তখন থেকে আমার অসহায় দুঃখকে চাবুকের মতই আমি নিজের শরীরে ব্যবহার করে আসছি।
        এনি হাউ, আমি ১২ এপ্রিল দুপুর ১২-১২.৫০ এর মধ্যে দমদম বিমানঘাঁটিতে পৌঁছব। কলকাতা পৌঁছে ব্যক্তিগতভাবে আমার একমাত্র সান্ত্বনা থাকবে বিমানঘাঁটিতে পৌঁছেই যদি তোমাকে এবং অন্যান্য সবাইকে দেখতে পাই। যেভাবেই হোক বিমানঘাঁটিতে চলে এসো। তারপর এয়ারলাইন অফিস এর গাড়িতে না এসে একসঙ্গে ট্যাক্সিতে করে ফেরা যাবে কলকাতায়।
        ১৪ এপ্রিল কোর্টে সারেন্ডার করার দিন। এর মধ্যে জামিনের সব ব্যবস্হা করে রেখো। আজ আর কিছু লিখি না --- লিখলে কেবল অনুশোচনা ও বর্বর সহানুভূতিই আমাকে কাটবে। ভালোবাসা জানাই। তোমার
                                                                     প্রদীপ চৌধুরী
                                                                        ৭/৪/১৯৬৫ 
                      

রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১২

সুবিমল বসাক-এর চিঠি ( সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা )

১৩ বিপিন গাঙ্গুলি রোড
দমদম, কলকাতা ৭০০ ০৩০
২৭/৭/১৯৬৪
প্রিয় সমীরদা
        আমি পাটনায় গিয়েছিলুম, শুনলুম আপনি চাইবাসায়। মলয়কে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বলেছি। শক্তি একদিন ( যেদিন যুগান্তরে নিউজ বেরিয়েছিল ) আমায় কফিহাউস থেকে নীচে ডেকে মারধোর করার চেষ্টা করেছিলো। আপনি জানেন, আমি পাটনার ছেলে, মুখে কথা বলার চেয়ে কাজে বেশী--- সেদিনই আমি শক্তিকে উচিত শিক্ষা দিয়ে দিতুম, কিন্তু আমার বন্ধুদের জন্য করলাম না। তবে আমি ডায়েরি করেছি থানায়, এই বলে রটিয়েছি, এবং ভবিষ্যতে শক্তির নামে কেস ঠুকে দেবো বলেছি। 'হাংরি জেনারেশান' বুলেটিনটা এখনও বের হল না। প্রেসগুলি ছেপে দেবে বলে কথা দিচ্ছে অথচ ম্যাটার দেখে সরে যাচ্ছে। এখানে অবশ্য নানা রকম রিউমার শোনা যাচ্ছে। অনেক কথা। আজ স্টেনসিলে একটা 'হাংরি বুলেটিন' বের করে দিলাম-- ডিসট্রিবিউট করিনি। ওটা পাটনা থেকে ছেপেছি, বলেছি। কলকাতা কবে আসছেন ? মলয় সম্ভবত অগাস্টে আসবে বলে কথা দিয়েছে। দেখা যাক। এখন এলে পরে সবার সঙ্গে দেখা করার চান্স আছে। মলয়কে 'হাংরি' বুলেটিন পাঠিয়েছি।
                                                                          সুবিমল বসাক
( শক্তি চট্টোপাধ্যায় হাংরি জেনারেশান মামলায় মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। যে বুলেটিনটির কথা সুবিমল বসাক চিঠিতে লিখেছেন সেইটির বিরুদ্ধে ব্যাংকশাল কোর্টে মামলা হয়েছিল। শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুভাষ ঘোষ, যাঁদের লেখা এই সংখ্যাটিতে ছিল, তাঁরা মলয়ের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন।

                 









শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১২

কবিরুল ইসলাম-এর চিঠি ( দেবী রায়কে লেখা )

কবিরুল ইসলাম
লেকচারার ইন ইংলিশ
সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ
পো: সিউড়ি, জেলা বীরভূম
৭.১২.১৯৬৫
সবিনয় নিবেদন,
আপনার কার্ড যথাসময়ে পেয়েছি। চিঠির জন্য ধন্যবাদ খুব।
শ্রী সুবিমল বসাক বিরচিত ছাতামাথা পেয়েছি। জেব্রা এখনও আমার হস্তগত হয়নি। আমার জনৈক বন্ধু কোলকাতায় তাঁর বাসায় ভুলক্রমে ফেলে এসেছেন। বড়দিনের ছুটিতে তিনি এনে দেবেন। ভর্তি শীতে।
ছাতামাথা গ্রন্হটি আমার পক্ষে রিভ্যু করা অসাধ্য কাজ কেননা যে বিশেষ আঞ্চলিক ভাষায় গ্রন্হটির কথা-শরীর রচিত তার সূক্ষ্মতা, ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্য আমার কাছে একার্থে দুর্গম। দেখেছি, আঞ্চলিক ভাষা মাত্রেই কাব্যধর্মী এবং একমাত্র কবিতা--- লিভিং পোয়েট্রি । পুরুষানুক্রমে পশ্চিমবাংলার বীরভূমে আমাদের বসবাস। কাজেই এই বাঙাল ভাষায় আমার প্রবেশ নিষেধ প্রায়। সেক্ষেত্রে এই গ্রন্হটির মূল্যায়ন ? আমার আয়ত্তের বাইরে। তবে ছাতামাথা আমি আদ্যন্ত রুদ্ধশ্বাসে পড়েছি, বুঝেছি, অগ্নিমুখ আন্তরিকতা শিল্পীর এই প্রাথমিক শর্তে এই গ্রন্হটি চিহ্ণিত। এই শর্তে তিনি নক্ষত্রভেদে সমর্থ। একটি অনুচ্চারিত-পূর্ব স্বগতোক্তি। কবিতার সংগোত্র।
        আপনাদের গ্রন্হাদি এখানে আমার বন্ধুদের ভালো লেগেছে। জেব্রা'র পরবর্তী সংকলন আমাকে অবশ্যই পাঠাবেন। প্রথম সংকলনের দাম পাঠিয়ে দেব। পড়লে আমার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবো।
        সিউড়ি আসার জন্য আপনাকে, সুবিমলবাবুকে নিমন্ত্রণ জানাই।
আশাকরি কুশলে আছেন। চিঠি দেবেন।
                                                                              বিনীত--
                                                                          কবিরুল ইসলাম


 

শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১২

মাহবুব তালুকদার-এর চিঠি ( সুবিমল বসাককে লেখা )

ঢাকা
২৭/৭/১৯৬৬
প্রিয় সুবিমল
          অনেকদিন পরে তোমাকে চিঠি লিখছি। তোমাদের পত্রপত্রিকাগুলো ঠিকমতোই আমার হাতে এসে পৌঁছেচে। আজও মলয়ের লেখা তোমার ওপরে আলোচনা পড়লাম।
          ঢাকায় ছিলাম না অনেকদিন। পড়াশোনার জন্যে কুমিল্লা গিয়েছিলাম। ওখানে একটা ভালো লাইব্রেরি আছে। ফিরে এসে সমীরের 'আমার ভিয়েতনাম' পেলাম। 
          তোমার 'ছাতামাথা' সম্পর্কে আগে কিছু বলেছিলাম কিনা মনে নেই। বিভিন্ন সময়ে আমি কয়েকবার বইটি পড়েছি। বইটির স্বাদ আমার রসনা তৃপ্ত করেছে। 'ছাতামাথা' পড়ার পর কিছুকাল আমার নিজের লেখা বন্ধ রাখতে হয়েছে। লিখতে বসলে কলমের মুখে তোমার প্রভাব নির্গত হতে শুরু করত।
          'ছাতামাথা' শুধু তোমাদের গোত্রীয় লোকের প্রশংসা অর্জন করুক, এটা আমি আশা করি না। বইয়ের যথাযোগ্য মূল্যায়ন হলে আমাদের চেতনার কিছু জাগৃতি হবে বোঝা যায়। ভাষা আয়ত্বের চেয়েও। পরিবেশনির্ভর ভাবে তা প্রয়োগ করার শক্তিতে তুমি ঈর্ষাযোগ্য। তোমার বই এবং তুমি পশ্চিমবঙ্গে কতটা আলোচিত হয়েছ, জানতে উৎসুক হয়ে আছি। ওখানকার সাহিত্যের সব ধারা আমাদের জন্য বন্ধ। দু'পাশের মাঝখানে যুদ্ধ যে  দেয়াল গেঁথেছে তা ভেদ করে সাহিত্যের কোনো প্রবাহই এসে পোঁছোয় না।
          এখানেই শেষ করছি। তোমাদের খবরা-খবর দিয়ে চিঠি পাঠিও। নতুন আর বই-টই বেরুল কারুর ?
                                                                    প্রীতি ও শুভেচ্ছাসহ---
                                                                     তোমাদের মাহবুব

মণীশ ঘটক-এর চিঠি ( সুবিমল বসাককে লেখা )

১৪.৯.১৯৬৫
সবিনয় নিবেদন
'ছাতামাথা' পেয়েছি, পড়েছি, এবং বলতে পরি যে, বইটি মনে গভীর দাগ কেটেছে।অন্তত আমি তো পড়ে বুঝেছি ও উপভোগ করেছি।
                                                                           ভবদীয়
                                                                          মণীশ ঘটক

করুণানিধান মুখোপাধ্যায়-এর চিঠি ( মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা )

প্রযত্নে: লেফ্ট কর্নেল জিৎ সিং
কাঠমাণ্ডু
১১/৪/১৯৬৬
মলয় হুররররররররে,
এই ঠিকানায় চিঠি দাও বা প্রভাতীর চিঠি এলে সেই চিঠিকে রিডাইরেক্ট না করে আর একটা খামের মধ্যে পুরে নতুন ভারতীয় স্ট্যাম্প লাগিয়ে পাঠাও।
কী করে আসতে হবে চার্ট দিলাম।
সমীরকে চিঠি দিয়েছি। অনিলকেও।
কাল থেকে বেরিয়ে পড়ব বার্তা নিয়ে।
এখানে, সেই যে, বালিশের নিচে মুড়ি দিয়ে র‌্যাঁবো পড়ে, সেই ঘি (     )-এর সঙ্গে দ্যাখা--- ওর ওখানেই উপস্হিত।
দারুণ ব্যাপার।
তাড়াতাড়ি এসো।
লুণ্ড হয়ে থাকা যাক কিছু দিন।
অফুরন্ত চরস আর মেয়েছেলে। 
আণ্ডারগ্রাউণ্ড আর ওভারগ্রাউণ্ড মিলিয়ে প্রায় ২০০ জন ছেলে-মেয়ে---একেবারে গিজগিজ করছে । শিগগির এসো, আমি একটা হাংরি হ্যাপেনিং করার তালে আছি। পরে মোটা খাম পাঠাচ্ছি।
                                                         করুণানিধান মুখোপাধ্যায়

অ্যালেন গিন্সবার্গ-এর চিঠি ( ডিক বাকেনকে লেখা )

নিউ ইয়র্ক
ডিসেম্বর ২৮, ১৯৬৬
প্রিয় শ্রীবাকেন
    বাঙলা কবিতা সম্পর্কে আমি যা জানি তা আমি দ্বিতীয় সংখ্যা 'সিটি লাইটস জার্নাল'-লিখেছি, এবং মলয় রায়চৌধুরীর ম্যানিফেস্টোসহ কলকাতার অন্যান্য কবিদের রচনা আমেরিকায় পাঠকের দৃষ্টিগোচর করার জন্য যা করা প্রয়োজন করেছি। মলয় রায়চৌধুরীর এখনকার কবিতা যেমন 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' পড়ে তাঁর জীবন্ত অস্তিত্বের কথা অনুভব করা যায়; এমন কী তাঁর নিজের-করা বাঙলা অনুবাদেও খুবই পাঠযোগ্য মনে হয়। একটা কথা তাঁর মনে রাখা উচিত যে এসট্যাবলিশমেন্টের লেখকদের সম্পর্কে এবং কয়েকজন সহযোগী কবিদের সম্পর্কে তাঁর তাচ্ছল্য, যাঁরা মনে করেন যে ভারতীয় ভাষায় তাঁর রচনা নোংরা লাগে, তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । সে সব বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে স্বীকার করতেই হয় যে তাঁর মাথাভারি-সমালোচকদের তুলনায় তাঁর মার্কিনি ইংরেজিতে অনুদিত কবিতা পড়লে বিদ্যুতের ঝলক পাওয়া যায়।

অ্যালেন গিন্সবার্গ 

মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১২

ত্রিদিব মিত্র-র চিঠি ( মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা )

প্রিয় মলয়
              'দেশ' পত্রিকা আমাদের বই আর পত্রিকার বিজ্ঞাপন রিফিউজ করেছে। বিস্তারিত জানাচ্ছি।
                                                                              ত্রিদিব মিত্র
                                                                              ১৯/৪/১৯৬৫

সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০১২

জ্যোতির্ময় দত্ত-র চিঠি ( ডিক বাকেনকে লেখা )

                                                                                                                      ওয়েস্ট ব্র্যাঞ্চ, আয়ওয়া
                                                                                                                 ডিসেম্বর ১২, ১৯৬৬
প্রিয় শ্রী ডিক বাকেন
            আমি ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছি যে পোর্টল্যান্ড, অরেগ্যানের মতো একটি স্হান থেকে কেউ কেন "হাংরি আন্দোলন" সম্পর্কে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে চাইছে। "সল্টেড ফেডার্স" পত্রিকার পৃষ্ঠা ভরাবার জন্য কি অরেগ্যানে যথেষ্ট প্রতিভা নেই , যে পত্রিকাটিকে তুমি বলছ একটি লিটল ম্যাগাজিন ? নাকি ব্যাপারটি বিদকুটে, বহির্জগতের, অদ্ভূত আগ্রহের ? এ যেন ভারতের ভোপাল, মধ্যপ্রদেশের কোনো পত্রিকা "আয়ওয়া শহরের পেনি পেপার"-এর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে চাইছে 'ট্রটস্কাইট মার্কিন বিপ্লবী কবিতা" নিয়ে ! অ্যালেন গিন্সবার্গ, টাইম ম্যাগাজিন, এবং সেই বোকা ম্যাজিস্ট্রেট যিনি মলয়কে সাজা দিয়েছিলেন, তাঁদের জনদরদী কাজের জন্য হুররররে।
                                                                                                        আপনার একান্ত
                                                                       জ্যোতির্ময় দত্ত

( সল্টেড ফেদার্স পত্রিকা হাংরি আন্দোলনকারীদের রচনা নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যার জন্য জ্যোতির্ময় দত্তকে অনুরোধ করেছিল তাদের রচনা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিতে। জ্যোতির্ময় শেষাবধি কয়েকজনের কবিতা অনুবাদ করে দিয়েছিলেন। তিনি সে-সময়ে অনুমান করতে পারেননি যে হাংরি আন্দোলন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে। মূল ইংরেজি চিঠিটি অনুবাদ করে দিয়েছেন ড. ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য । )

ফণীশ্বরনাথ রেণু-র চিঠি ( মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা )

                                                                                                                                          পাটনা
                                                                                                                                        ১৮.১২.১৯৬৪
মলয়বাবু
       আপনার চিঠি দুমকা থেকে লেখা পেয়েছি। আপনার লেখা সাধারণ ডাকে পাঠাইবার সাহস হল না---তাই Regd কোরে পাঠাচ্ছি। সমীরবাবু কোথায় ? সেদিন---ঠান্ডার দিনে আমাদের আড্ডা জমেছিল ভালো কিন্তু, কিন্তু... সমীরবাবুকে কিছু খাওয়ানো হল না। 'ধর্মযুগ'এর লেখা আমি সোমবার (২১/১২ ) পাঠাচ্ছি। হ্যাঁ--- সেদিন সমীরবাবুর সঙ্গে কি ভারতীয় ফিলমস সম্বন্ধে যে আলোচনা হয়েছিল--- আমি ভাবছি--- 'মাধুরী'তে দেওয়া ঠিক হইবে। সমীরবাবুর বক্তব্যকে আমার লেখাতে কি কোরে mix  করা যায়। Interview     গোছের রচনা ঠিক হইবে।
      দেবীবাবুর story আমি এখনও Translate   কোর্বার সুযোগ করতে পারছি না। তবে কোর্বো ঠিকই।
       তারপর ? আপনি ফিরে এলে আপনার উপন্যাসটা পড়া যাবে।
       'মরাল'ওয়ালাদের কোনো চিঠিপত্তর ? শরদ দেওড়াকে আজ চিঠি দিলাম--- ২৫/১২ নাগাদ নিশ্চয় লেখা পাঠাচ্ছি। ভীষণ রেগে আছে আমার উপর।
       এবার পাটনা আসিবার সময় দেবীবাবুকে নিয়ে আসবেন। হ্যাঁ--- সেই পিকাসোর ডাইভোর্সির লেখা বই---- যার সম্বন্ধে Time এ পড়েছিলাম, কলকাতায় এসে গেছে কি? খোঁজ নেবেন। পাওয়া গেলে নিয়ে আসবেন।
     আমরা, মায় নৌমি--ভালো আছি। চিঠি দেবেন।
                                                                          ইতি--- রেণুজী
( প্রখ্যাত হিন্দি ঔপন্যাসিক ফণীশ্বরনাথ রেণু-র এই চিঠিটি বাংলাতেই লেখা। তাঁর কুকুরের নাম ছিল 'নৌমি'। 'মরাল' কাঞ্চনকুমার সম্পাদিত হিন্দি পত্রিকা যা বারাণসী থেকে প্রকাশিত হত ।)

রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১২

লরেন্স ফেরলিংঘেট্টির চিঠি ( মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা )

                                                                                        সিটি লাইটস, এস এফ,         
                                                           ক্যালিফোর্নিয়া 
                                                           মার্চ ২৬, ১৯৬৬
প্রিয় মলয়
         আমি তোমার কেসের আদালতের নির্ণয়ের কপি পেয়েছি, এবং তা পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। পড়ে আমার বেশ হাস্যকর মনে হল। পরবর্তী 'সিটি লাইটস জার্নাল'-এ তোমার কবিতা 'প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার'এর সঙ্গে প্রকাশ করতে চাই, যা এই গ্রীষ্মেই বেরিয়ে যাবে; আমি তার জন্য যৎসামান্য সাহায্য এই চিঠির সঙ্গে পাঠালাম, কেননা আমি জানি তোমার কাছে এর বড়বেশি প্রয়োজন এখন। আমি এই চিঠির একটি কপি এখনই হাওয়ার্ড ম্যাককর্ডকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমার অনুমান উনি এই চিঠিতে উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর জানেন এবং আমাকে তা পত্রপাঠ জানাবেন, কেননা সময়ের গুরুত্ব এক্ষেত্রে অমূল্য, এবং তোমার কাছ থেকে উত্তরগুলো পেতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। আমার মতে কবিতাটি মনোমুগ্ধকর, এবং সর্বপ্রথমে তা প্রকাশ করার জন্য আমি ম্যাককর্ডের কাছে অবশ্যই ঋণস্বীকার করব। ব্র্যাভো।
     অ্যালেন গিন্সবার্গ এখন নিউইয়র্কে এবং ওর নতুন ঠিকানা হল ৪০৮ ইস্ট, ১০ স্ট্রিট ( অ্যাপ্ট ৪সি ) নিউ ইয়র্ক, এন ওয়াই।
      আমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর চাই: ১) কবিতাটি কি প্রথমে বাংলায় রচিত এবং তার বাংলা অথবা ইংরেজি কোনটি বাজেয়াপ্ত করে মামলা করা হয়েছে ? ২) অনুবাদটি কি তোমার নিজের নাকি অন্য কারোর, কার ? ৩) তুমি কোনটির প্রকাশনা চাও, যেটি গত বছর পাঠিয়েছিলে না কি টাইপকরা কপিটি, অথবা যেটি ম্যাককর্ড প্রকাশ করেছেন (আমি কয়েকটা পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি)? 
      যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে জানাও। প্রেসের কাজ থামিয়ে রেখেছি। এবং গুড লাক। আশা করি এত কিছুর মাঝেও টিকে আছ। ভালোবাসাসহ--
                                                                     লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি

( ইংরেজিতে রচিত চিঠিটি অনুবাদ করে দিয়েছেন ড. ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য )



                                                                                                           

সুবিমল বসাক-এর চিঠি ( সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা )

প্রিয় সমীরদা
          পাঁচ তারিখে কোর্টের ঝামেলা চুকে গেলো। সুনীল, জ্যোতি ও তরুণ সান্যাল এসেছিলো। সুনীলের সাক্ষ্য খুব ভাল হয়েছে। অবশ্য তরুণ সান্যাল ও জ্যোতিরও ভাল গেছে। জজ সায়েবের ইচ্ছে বুদ্ধদেব বসু আসুন--- তবে, জ্যোতির ইচ্ছে নেই। পরবর্তী শুনানীর দিন পড়েছে ১৮/১৯ নভেম্বরে। সম্ভবত সেদিনই আর্গুমেন্ট শুরু হবে।
         মলয় সুনীলের সঙ্গে দেখা করেছিল এবং অনেক কথাবার্তা হয়েছে। সুনীলের সঙ্গে মুখোমুখি কথাবার্তায় অনেকগুলি ব্যাপার জানা গেছে--- যা আমাদের এতদিন ভুলের মধ্যে ফেলে রেখেছিল।
        কেসের হাওয়া দেখে মনে হচ্ছে--- আমাদেরই জিৎ হবে, দেখা যাক। কফিহাউসে কারো কারো মুখে আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখা যেতে শুরু করেছে। 'জেব্রা'-র খুব ভাল রেসপন্স পাওয়া গেছে। শুধু পাতিরামের স্টলে এক দিনে ৪০ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। গতকাল একটি কবিতাও এসে হাজির হয়েছে 'জেব্রা'র জন্য।
        সেদিন সাড়ে সাতটায় স্টেশানে গিয়ে শুনলাম গাড়ি দুঘন্টা লেট, পরে দশটায় শুনলাম--- পাঁচ ঘন্টা লেট । তবু কোর্টে আশা করছিলাম আপনাকে।
         ডেভিডের একটা চিঠি এসেছে-- ছবি পেয়েছে।কতগুলি জিনিস ওকে পাঠাতে হবে-- প্যাকেট তৈরি হয়ে পড়ে আছে এক মাস যাবৎ। এ-মাসে পাঠাবো ভেবেছিলাম-- এবং কিছু টাকা পাবো কথা ছিল। সেটা পেতে-পেতে ১৫/২০ দিন লাগবে মনে হয়। অথচ পাঠানো দরকার। আপনি আমাকে কি ৫০/- ( পঞ্চাশ টাকা ) পাঠাতে পারবেন ? আর কারো কাছ থেকে চাইনি। চাইবাএ ইচ্ছে নেই। মলয়কে বলতে পারতাম, কিন্তু আমাকে এতভাবে সাহায্য করেছে যে আর চাওয়া যায় না, অথচ জিনিসগুলো পাঠানো একান্ত দরকার। অবশ্য আমি আপনাকে ফেরত দিতে পারব বলে মনে করি। আপনি এ-বিষয়ে কিছু সাহায্য করুন। ভেবেছিলাম, কোনোমতে হয়ে যাবে--- কিন্তু কিছুতেই হলো না। যা আছে তাতে কিছুই হবে না। দরকারটা বুঝতে পারছেন নিশ্চই !
          আর সব ভাল। চিঠির জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
                                                                         সুবিমল বসাক
                                                                           ৭/১১/৬৫
( সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল ও জ্যোতির্ময় দত্ত মলয় রায়চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দিলেও মলয়ের সাজা হয়েছিল। মূলত শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুভাষ ঘোষের মুচলেকা ও সাক্ষ্যের কারণে  )