সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮

হাংরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর চিঠি মলয় রায়চৌধুরীকে : হাংরি কিংবদন্তি


আয়ওয়া, আমেরিকা, ১০ জুন ১৯৬৪

          মলয়,
          তুমি কলকাতায় কি সব কাণ্ডের বড়াই করে চিঠি লিখেছ জানি না । কী কাণ্ড করছ ? আমার বন্ধু-বান্ধবদের কেউ-কেউ ভাসা-ভাসা লিখেছে বটে কফিহাউসে কী সব গণ্ডোগোলের কথা ।
          কিছু লেখার বদলে আন্দোলন ও হাঙ্গামা করার দিকেই তোমার লক্ষ্য বেশি । রাত্রে তোমার ঘুম হয় তো ? এসব কিছু না --- আমার ওতে কোনো মাথাব্যথা নেই । যত খুশি আন্দোলন করে যেতে পারো --- বাংলা কবিতার ওতে কিছু আসে যায় না । মনে হয় খুব একটা শর্টকাট খ্যাতি পাবার লোভ তোমার । পেতেও পারো, বলা যায় না । আমি এসব আন্দোলন কখনো করিনি ; নিজের হৃৎস্পন্দন নিয়ে আমি এতই ব্যস্ত ।
          তবে একথা ঠিক, কলকাতা শহরটা আমার । ফিরে গিয়ে আমি ওখানে রাজত্ব করব । তোমরা তার এক 'চুলও' বদলাতে পারবে না । আমার বন্ধুবান্ধবরা আনেকেই সম্রাট । তোমাকে ভয় করতুম, যদি তোমার মধ্যে এখন পর্যন্ত একটুও জেল্লা দেখতে পেতুম । আমার চেয়ে কম বয়সিদের মধ্যে একমাত্র তন্ময় দত্ত এসেছিল বাংলা কবিতায় তলোয়ার হাতে, আমার চেয়ে অন্তত ছ'বছরের ছোটো---- কিন্তু জীবনানন্দের পর অত শক্তিশালী কবি এদেশে আর কেউ আসেনি । প্রচণ্ড অভিমান করে ও চলে গেছে । সেজন্যে এখনও আমি অপরের হয়ে অনুতাপ করি । আমি নিজে তো এখনও কিছুই লিখিনি , লেখার তোড়জোড় করছি মাত্র ; কিন্তু তোমার মতো কবিতাকে 'কমার্শিয়াল' করার কথা আমার কখনো মাথায় আসেনি ।  বালজাকের মতো আমি আমার ভোকাবুলারি আলাদা করে নিয়েছি কবিতা ও গদ্যে । তোমার প্রতি যতই আমার স্নেহ থাক মলয়, কিন্তু তোমার কবিতা সম্বন্ধে এখনো কোনোরকম উৎসাহ আমার মনে জাগেনি । প্রতীক্ষা করে আছি অবশ্য ।
          অনেকের ধারণা যে পরবর্তী তরুণ জেনারেশানের কবিদের হাতে না রাখলে  সাহিত্যে খ্যাতি টেকে না । সে জন্যে আমার বন্ধুবান্ধবদের  মধ্যে কেউ-কেউ একসময় তোমাদের মুরুব্বি হয়েছিল । আমি ওসব গ্রাহ্য করি না । নিজের পায়ে আমার যথেষ্ট জোর আছে, এমনকী একা দাঁড়াবার । আমার কথা হল : যে-যে বন্ধু আছ কাছে এসো, যে ভালো কবিতা লেখো কাছে এসো --- যে-যে বন্ধু নও , বাজে কবিতা লেখো, দূর হয়ে যাও কাছ থেকে । বয়সের ব্যবধান তোলা আমার কাছে অত্যন্ত ভালগার লাগে ।
          চালিয়ে যাও ওসব আন্দোলন কিংবা জেনারেশানের ভণ্ডামি । আমার ওসব পড়তে কিংবা  দেখতে মজাই লাগে । দূর থেকে । সাহিত্যের ওপর মৌরসি পাট্টা বসাতে এক-এক দলের অত লোভ কী করে আসে , কী জানি ।  তবে একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো । আমাকে দেখেছ নিশ্চয় শান্তশিষ্ট, ভালো মানুষ । আমি তাই-ই, যদিও গায়ে পদ্মাপাড়ের রক্ত আছে । সুতরাং, তোমাদের উচিত আমাকে দূরে-দূরে রাখা , বেশি খোঁচাখুঁচি না করা । নইলে হঠাৎ উত্তেজিত হলে কী করব বলা যায় না । জীবনে ওরকম উত্তেজিত হয়েছি পৌনে এক বার । গত বছর । দুএকজন বন্ধুবান্ধব ও-দলে আছে বলে নিতান্ত স্নেহবশতই তোমাদের হাংরি জেনারেশান গোড়ার দিকে ভেঙে দিইনি । এখনও সে ক্ষমতা রাখি , জেনে রেখো । তবে এখনও ইচ্ছে নেই ও-খেলাঘর ভাঙার ।
          আমার এক বন্ধু জানিয়েছে যে তোমরা নাকি আমার কোনো কোনো চিঠির অংশ-বিশেষ ছাপিয়েছ । পত্রসাহিত্য-ফাহিত্য করার জন্য আমি চিঠি লিখি না । আমার চিঠি নেহাত কেজো কথা ।  অবশ্য লুকোবারও কিছু নেই । কিন্তু আগে-পরের কথা বাদ দিয়ে, ডটডট মেরে, চালাকির জন্য আমার কোনো চিঠি যদি কেউ ছাপিয়ে থাকে --- তবে আড়াই মাস পরে ফিরে তার কান ধরে দুই থাপ্পড় লাগাব বলে দিও ।
          আশা করি শারীরিক ভালো আছ । আমার ভালোবাসা নিও ।
                                                                                                                                             সুনীলদা

( The facsimile of the letter was first published in 1987 in the book HUNGRY, SHRUTI and SHASTROBIRODHI ANDOLON by Dr Uttam Das. Publisher : Mahadiganto Prokashani, Padmapukur Mor, Kolkata 700 144. The letter has been reprinted thereafter in various books and periodicals and used by researchers doing M Phil and PhD )

রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮

অজিত রায়কে লেখা মলয় রায়চৌধুরীর চিঠি

                                                                           
     
                                                                                


                                                                             
                                                                          

                                                                            
                                                                             

                                                                             
                                                                                

                                                                                 
                                                                             


অজিত রায়কে লেখা মলয় রায়চৌধুরীর চিঠি