কোচিন
৮.১.১৯৬৩
সুনীল,
তোর ২৭/১২ তারখের চিঠি পরে পেলাম । আমার এই ট্রেনিঙ মোটেই ভালো লাগছে না । ফলে মনমেজাজ কৃষকের মতো হয়ে গেছে । ট্রেনিঙটা ছেড়ে যাবারও সাহস নেই, তাহলে চাকরী যাবে । চাকরী গেলে বউ, আবার এই ফেব্রুয়ারিতেই ছেলে বা মেয়ের সিকিউরিটির ভার পড়বে । ফলে কোনো মতে জুন অব্দি এই কষ্ট সহ্য করতে হবে । জুনের পর এক বছে টুর । টুর মন্দ লাগে না ঘুরতে ঘুরতে । সমুদ্র সম্পর্কে প্রচণ্ড বিরক্তি ধরে গেছে । সমুদ্র দেখলেই ভীষণ ক্রোধ হয়, যেন প্রতিদ্বন্দ্বী আমার ।
বেলাকে নিয়ে ঘর করা খুব সুখকর । ভারী সরল ও নিপুণ মেয়ে । মনের মতন বউকে মেয়েমানুষ মনে হয় না, বরং বন্ধু ঘনিষ্ঠ অতি । নিজেকে খুব সিকিওর্ড মনে হয় । আমার মনে হব পৃথিবীর যেকোনো নারীর সঙ্গে একটা অন্তঃশীল মাতৃত্বের সম্পর্কই সব চেয়ে সুখময় । অনেক বঢ় হয়ে গেলেও আমাদের শিশু মরে যায় না, ঝরে যায় না । তোর মা এবং ভাইবোনেদের সঙ্গে কলকাতায় থাকা ছাড়া আর কোনো কিছুকেই আমার ঈর্ষা হয় না । মেয়েমানুষ সম্পর্কে তোর মতামত আমি মানি না । এটা ঠিক যে মেয়েমানুষের কাছে কেবল লিঙ্গ উপস্হাপনার কোনো অস্তিত্ব নেই । সব মেয়েমানুষ সমান নয় । ফলে মেয়েমানুষ খুঁজে বের করাই কঠিন ।
কৃত্তিবাসের জন্য আমি ৬০ টাকা দেবো । যখনই দরকার তৎক্ষণাৎ পাঠাব । এখনই কি পাঠাবো ? পাঠাচ্ছি না এই জন্য যাতে কৃত্তিবাসের ঠিক প্রয়োজনের সময় পাস । নয়তো খরচা হয়ে যাবার বিড়ম্বনা তোর হয়তো হতে পারে । যাই হোক, আমাকে যখনই বলবি, পাঠাবো । ঐ কাগজগুলো সম্পর্কে ভাবিস না, শক্তির বন্ধুত্বে ও আমার নষ্ট সম্পত্তির মধ্যে আমি ধরে নিয়েছি ।
হাংরি জেনারেশনের প্যামফ্লেট-এ যা লিখেচি সে হয়তো তোরই বক্তব্য । তোর কি ভালো লাগেনি ?
কৃত্তিবাসের জন্য একটা ভালো গদ্য লিখেছি । শীগগিরই পাঠাবো । প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরকে যাকিছু দেয় তারই পরিণতি সম্পর্কে বক্তব্য । জানি, মেঘ, গান, মূর্তি প্রত্যেকটির গমনাগমন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি । অর্থাৎ এই পাখি আকাশ না খুঁজে খাঁচা চায়, মেঘ শষ্যের দিকে ডোবে । গান প্রতিধ্বনি আনে না । পাঠালে হয়তো বুঝতে পারবি ।
অলোকরঞ্জনের হয়তো অকারণে কিছু ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স আছে, ওর নিজের ঈশ্বর সম্পর্কে । আমি অলোকরঞ্জনকে একবারই দেখেছিলাম বালিগঞ্জে । কথাবার্তায় একথাটা আমার মনে হয়েছিল । কেন ঠিক মনে নেই । তখন শক্তিকে বলেছিলাম ।
চিঠি দিস । প্রীতি রইলো ।
সমীর
৮.১.১৯৬৩
সুনীল,
তোর ২৭/১২ তারখের চিঠি পরে পেলাম । আমার এই ট্রেনিঙ মোটেই ভালো লাগছে না । ফলে মনমেজাজ কৃষকের মতো হয়ে গেছে । ট্রেনিঙটা ছেড়ে যাবারও সাহস নেই, তাহলে চাকরী যাবে । চাকরী গেলে বউ, আবার এই ফেব্রুয়ারিতেই ছেলে বা মেয়ের সিকিউরিটির ভার পড়বে । ফলে কোনো মতে জুন অব্দি এই কষ্ট সহ্য করতে হবে । জুনের পর এক বছে টুর । টুর মন্দ লাগে না ঘুরতে ঘুরতে । সমুদ্র সম্পর্কে প্রচণ্ড বিরক্তি ধরে গেছে । সমুদ্র দেখলেই ভীষণ ক্রোধ হয়, যেন প্রতিদ্বন্দ্বী আমার ।
বেলাকে নিয়ে ঘর করা খুব সুখকর । ভারী সরল ও নিপুণ মেয়ে । মনের মতন বউকে মেয়েমানুষ মনে হয় না, বরং বন্ধু ঘনিষ্ঠ অতি । নিজেকে খুব সিকিওর্ড মনে হয় । আমার মনে হব পৃথিবীর যেকোনো নারীর সঙ্গে একটা অন্তঃশীল মাতৃত্বের সম্পর্কই সব চেয়ে সুখময় । অনেক বঢ় হয়ে গেলেও আমাদের শিশু মরে যায় না, ঝরে যায় না । তোর মা এবং ভাইবোনেদের সঙ্গে কলকাতায় থাকা ছাড়া আর কোনো কিছুকেই আমার ঈর্ষা হয় না । মেয়েমানুষ সম্পর্কে তোর মতামত আমি মানি না । এটা ঠিক যে মেয়েমানুষের কাছে কেবল লিঙ্গ উপস্হাপনার কোনো অস্তিত্ব নেই । সব মেয়েমানুষ সমান নয় । ফলে মেয়েমানুষ খুঁজে বের করাই কঠিন ।
কৃত্তিবাসের জন্য আমি ৬০ টাকা দেবো । যখনই দরকার তৎক্ষণাৎ পাঠাব । এখনই কি পাঠাবো ? পাঠাচ্ছি না এই জন্য যাতে কৃত্তিবাসের ঠিক প্রয়োজনের সময় পাস । নয়তো খরচা হয়ে যাবার বিড়ম্বনা তোর হয়তো হতে পারে । যাই হোক, আমাকে যখনই বলবি, পাঠাবো । ঐ কাগজগুলো সম্পর্কে ভাবিস না, শক্তির বন্ধুত্বে ও আমার নষ্ট সম্পত্তির মধ্যে আমি ধরে নিয়েছি ।
হাংরি জেনারেশনের প্যামফ্লেট-এ যা লিখেচি সে হয়তো তোরই বক্তব্য । তোর কি ভালো লাগেনি ?
কৃত্তিবাসের জন্য একটা ভালো গদ্য লিখেছি । শীগগিরই পাঠাবো । প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরকে যাকিছু দেয় তারই পরিণতি সম্পর্কে বক্তব্য । জানি, মেঘ, গান, মূর্তি প্রত্যেকটির গমনাগমন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি । অর্থাৎ এই পাখি আকাশ না খুঁজে খাঁচা চায়, মেঘ শষ্যের দিকে ডোবে । গান প্রতিধ্বনি আনে না । পাঠালে হয়তো বুঝতে পারবি ।
অলোকরঞ্জনের হয়তো অকারণে কিছু ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স আছে, ওর নিজের ঈশ্বর সম্পর্কে । আমি অলোকরঞ্জনকে একবারই দেখেছিলাম বালিগঞ্জে । কথাবার্তায় একথাটা আমার মনে হয়েছিল । কেন ঠিক মনে নেই । তখন শক্তিকে বলেছিলাম ।
চিঠি দিস । প্রীতি রইলো ।
সমীর