মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১২

প্রদীপ চৌধুরীর চিঠি ( মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা )

প্রিয় মলয়,
        এর মধ্যে তোমাকে চিঠি, সুভাষকে চিঠি এবং টেলিগ্রাম পাঠিয়েছি, তোমার ঠিকানা সম্পর্কে আমি শিওর নই, তাই আর কিছু করতে পারলাম না। ট্রাংক কল করার ইচ্ছে ছিল।
        কলকাতার পুলিশ আমাকে ৩১ মার্চ, ৬৫ ত্রিপুরায় এসে গ্রেপ্তার করেছে ; কিন্তু আজ আর সেই প্রাথমিক উচ্ছাস একদম নেই, জুজুর ভয়ও নেই। কবিতার বুকের ওপর চেপে বসলে সম্ভবত এইটেই ভবিতব্য। তুমি হাজতে বসে যা আমাকে লিখেছিলে ---- আমি তার সিগনিফিকান্স আগে যেমন, এখন তার চেয়ে অনেক স্বাভাবিক, তাই অনেক ভয়ংকর করে ভাবতে পারছি।
        অনেকদিন এমন নিঃসঙ্গতা ও ভয় ও অনুশোচনায় কাটিয়েছি যে, কী দারুণ উৎকন্ঠার ভিতর আমি প্রদীপ চৌধুরীর যাবতীয় আবরণ খুলে, লাথি মেরে নষ্ট করে, একজন কবন্ধ লেখকে পরিণত হয়েছি। আমাকে না দেখলে আমার মুখোমুখি না হলে, তুমি বুঝতে পারবে না। অসম্ভব দুঃখ পেয়েছি যেদিন শৈলেশ্বরদের ঠিকানা থেকে আমার বই ফেরত এসেছিল ( ওরা রিফিউজ করেছিল ) --- হ্যাঁ তখন থেকে আমার অসহায় দুঃখকে চাবুকের মতই আমি নিজের শরীরে ব্যবহার করে আসছি।
        এনি হাউ, আমি ১২ এপ্রিল দুপুর ১২-১২.৫০ এর মধ্যে দমদম বিমানঘাঁটিতে পৌঁছব। কলকাতা পৌঁছে ব্যক্তিগতভাবে আমার একমাত্র সান্ত্বনা থাকবে বিমানঘাঁটিতে পৌঁছেই যদি তোমাকে এবং অন্যান্য সবাইকে দেখতে পাই। যেভাবেই হোক বিমানঘাঁটিতে চলে এসো। তারপর এয়ারলাইন অফিস এর গাড়িতে না এসে একসঙ্গে ট্যাক্সিতে করে ফেরা যাবে কলকাতায়।
        ১৪ এপ্রিল কোর্টে সারেন্ডার করার দিন। এর মধ্যে জামিনের সব ব্যবস্হা করে রেখো। আজ আর কিছু লিখি না --- লিখলে কেবল অনুশোচনা ও বর্বর সহানুভূতিই আমাকে কাটবে। ভালোবাসা জানাই। তোমার
                                                                     প্রদীপ চৌধুরী
                                                                        ৭/৪/১৯৬৫ 
                      

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন